সেকেন্ড হ্যান্ড হাসবেন্ড """""১ম পর্ব""""" লেখক:- Safayet Rana

 

সেকেন্ড হ্যান্ড হাসবেন্ড

"বাবা মার পছন্দে বিয়ে করলাম,আজ বাসর রাত আমার আর মিষ্টির"

আমি সাফাহেত চৌধুরী, A-B Group Of Lt. এর এমডি,তবে সততার কারণে গাড়ি বাড়ি তেমন করতে পারি নাই,নরমালি সাধারন ভাবে চলাফেলা করি,চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ি চোখে হালকা একটু প্রবলেম তাই,কখনও কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করি নাই,আজ আমার বাসর রাত,সত্যি বলতে মেয়ের সম্পর্কে কিছু জানি না,মেয়ে দেখতে কেমন,নাম টাও জানি না,বাবা মার উপর সব ছেড়ে দিয়েছি,,,,,,

বাসর ঘরে ডুকলাম...

আমি:-আরে আরে কি করছেন,

(আমার পা ধরে সালাম করছে মিষ্টি)

মিষ্টি:-বাসর ঘরে নতুন বর কে সালাম দিতে হয় মা শিখিয়ে দিসে!

(মেয়েটা খুব লক্ষী তো উঠিয়ে দিলাম)

তারপর অনেক কথা হলো,আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেলো,,তার নাম মিষ্টি(নাম যেমন মিষ্টি দেখতে ও তেমন মিষ্টি)

মিষ্টি:- শুনেন না আমি কখনও প্রেম করিনি আমার বিয়ে হলে বর এর সাথে প্রেম করবো তাই,

আমি:- আমি ও কখনও প্রেম করিনি,আসলে আমি তো দেখতে তেমন ভাল না তাই কেউ জুটে নি,

মিষ্টি:- এখন কারও সাথে প্রেম করা লাগবে না,আমার সাথে প্রেম করলেই হবে,

আমি:- আচ্ছা,শুনো আমি কিন্তু এই বাসায় একা থাকি,বাবা মা গ্রামে থাকে,তোমাকে সব গুছিয়ে নিতে হবে,

মিষ্টি:-তুমি কিছু চিন্তা করো না,ওহ সরি তুমি বলে পেললাম!

আমি:- আরে তুমি বললেই তো হবে,আমি তো তোমার আপনজন তাই না,

(সাথে সাথে মিষ্টি জরিয়ে ধরলো,আর কাদতে লাগলো)

মিষ্টি:-জানেন আমার মা নেই,বাবা আবার নতুন বিয়ে করছে আমি ছোট থাকতে,আমাকে খুব মারধর করতো,আমাকে ঠিক মতো খেতে দিতো না,খুব কষ্টে বড় হয়েছি,আমাকে কখনও তাড়িয়ে দিয়েন না প্লীজ,একটু আপনার পায়ের কাছে ঠাই দিয়েন!(জরিয়ে ধরে আছে,আমার কলিজা টা কেপে উঠলো)

আমি:-(আমি ও শক্ত করে জরিয়ে দ

ধরলাম)তুমি কোনো চিন্তা করো না,এই সংসার টা তোমার,তুমি তোমার মনে মতো করে গুছিয়ে নিও,আর আমি তো তোমার পাশে আছিই

[ভালই যাচ্ছে আমাদের দিন গুলি]

প্রায় ১ মাস পর,,,,

এই উঠো অফিসে যাবে না?(মিষ্টি)

আমি:-এইতো উঠছি,

আমি:-এই আমি ট্রাই লাগাতে পারছিনা,একটু এগিয়ে আসো তো,(আরে রোমাঞ্চ করার জন্য ডাকলাম)

মিষ্টি:- আসছি দাড়াও,,,এই কি হচ্ছে কি পাগল নাকি কেউ দেখে পেললে কি হবে বলো.

আমি:-দেখুক,আমি আমার বউকে কতো আদর করছি

মিষ্টি:-(আহা কি লজ্জ দিলো ধাক্কা)

অফিসে আসলাম,

(ফোন বাজছে)

আমি:- মিষ্টি আমি অফিসে ঠিকঠাক পৌছাইছি!

মিষ্টি:-আসার সময় আমার জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে আসিও কেমন?

আমি:-ওকে মিষ্টি

(আমার মতো বোকা হাদারাম কে একটা মেয়ে এতো ভালবাসে এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়,আমি খাম্বার মতো লম্বা একটা লোক দেখতে এতো টা ভাল না,মিষ্টি মতো মেয়ে আমাকে আগলে রাখছে,মনে মনে খুব খুশি লাগছে)

৩ বার কলিং বেল দিলাম,

আমি:- মিষ্টি তুমি ঠিক আছও তো?

মিষ্টি:-(আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দায়িয়ে আছে)

আমি:- চলো ভেতরে চলো,

মিষ্টি:-চুপচাপ

(বুজতে পারলাম না মিষ্টি রাগ করে আছে কেন)

আমি:- কি হলো তুমি রাগ করে আছও কেন,

মিষ্টি:- যাও গোসল করে আসো,টেবিলে খাওয়ার দিচ্ছি,

আমি:- আমার মিষ্টি বউটার কি হয়েছে বলো তো(ওর গাল ধরে)

মিষ্টি:- আমি তোমার কতো কাজ করে দি,আমি যখন ছোট কিছু আবদার করি তখন তোমার মনেই থাকে না?

আমি:-এরে সেরেছে রে,আইসক্রিম আনতে ভুলে গেছি,

[দিলাম দোকানের দিকে দৌড়]

আমি:- এই নাও আইসক্রীম,

মিষ্টি:- লাগবে না তোমার আইসক্রীম,

আমি:-আচ্ছা দাড়াও আমি খাচ্ছি তাহলে(রেগে দেওয়ার জন্য)

(মিষ্টি আমার চুল ধরে দিলো টান)

মিষ্টি:- দাও আমার আইসক্রীম আমাকে দাও,

(মেয়েটা ভিশন অভিমানি এক হাতে আমার সংসার টাকে গুছিয়ে রেখে অন্য হাতে আমাকে গুছিয়ে রাখে)

৩ মাস পর

[রাতে আমি আর মিষ্টি লুডু খেলছিলাম,হঠাত মিষ্টি মাথা গুরে পড়ে যায়]

আমি:- মিষ্টি মিষ্টি,(চেঁচিয়ে)

"তারাতারি হসপিটালে নিয়ে গেলাম"

কিছুখন পর...

আমি:- ডাক্তার সাহেব মিষ্টি কেমন আছে?

ডাক্তার:-আরে সাফাহেত সাহেব মিষ্টি খাওয়ান,আপনি বাবা হতে চলেছেন!

(কিইই,,, এতো খুশি আমি জীবনে ও হয়নাই,একটা চিতকার দিলাম মিষ্টি বলে)

আমি:-ডাক্তার আমি এখন ওর সাথে দেখা করতে পারবো?

ডাক্তার:- যান দেখা করে আসুন আর ওনার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু কোনো প্রকার যেনো ভারি কাজ না করে!

কেবিন এ গিয়ে...

(সাথে সাথে জরিয়ে ধরলাম মিষ্টি কে,মনে হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সুখি মানুষ আমি)

[যতখন আমি বাসায় থাকি মিষ্টিকে কোনো কাজই করতে দেই না,ওকে সব সময় জরিয়ে ধরে রাখি,মিষ্টি আমার ঘরের লক্ষী]

মিষ্টি:-এই তুমি আমাকে উঠতে দিচ্ছো না কেন?

আমি:-ডাক্তার মানা করছে তুমি ভারি কোনো কাজ না করো,

মিষ্টি:-তাই বলে আমি হাটাহাটি করতে পারবো না বলো?

আমি:-তুমি কিছু করা লাগবে না সব আমি করবো?

মিষ্টি:- পাগল একটা!শুনো না?

আমি:- হুম বলো!

মিষ্টি:-আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি কি করবে?আমার বাচ্চার জন্য নতুন একটা মা আনিও যাতে তোমার সব কাজ করে তোমার সংসার আবার নতুন করে গুছিয়ে রাখে

আমি:- একটা থাপ্পড় দিবো মিষ্টি,এসব কথা আর কখনও বললে!(রাগ লাগলো ভিশন)

মিষ্টি:-ওরে বাবা আমার বর টা ভিশন রেগে গেছে!

(মিষ্টি হঠাত আমার কপালে চুমু দিলো,তার বিপরীতে আমি ও ভালবাসার চুমু একে দিলাম)

[৮ মাসের সময় আমার মা আসলো মিষ্টি খেয়াল রাখার জন্য]

অফিসে কাজ করছিলাম.......

আমি:- হ্যলো মা,

মা:- বাবা তারাতারি বাসায় আই,মিষ্টি মার খুব বথ্যা উঠছে?

আমি:- কিইইই,মা আমি আসছি(তারাতারি বের হোলাম)

[আমি মিষ্টিকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি এমবুলেন্সে,মিষ্টি বথ্যায় কাতরাতচ্ছে,আমি খুব ভয় পেয়ে আছি]

আমি:- মিষ্টি মিষ্টি এই দিকে তাকাও.(বার বার সেন্সলেন্স হচ্ছে আবার জ্ঞান আসছে)

মিষ্টি:- ওগো আমার খুব বথ্যা হচ্ছে?(মিষ্টি কাদতেছে)

আমি:- তুমি একটু ধর্য ধরো মিষ্টি আমরা হসপিটালের কাছাকাছি একটু ওয়েট করো,(আমার চোখের জল পড়ছে,মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে)

মিষ্টি:-আমার যদি কিছু হয়ে যায়,আমার বাচ্চাকে ভাল রাখবে কথা দাও,তুমি নতুন করে আবার বিয়ে করবে,তোমার অফিসের যাওয়ার সময় কে সকালে উঠাবে বলো,নাস্তা করে দিবে কে তোমাকে তোমার ট্রাই কোট কে পরিয়ে দিবে,আমার খুব ভয় হচ্ছে,আমি হয়তো আর পারবো না এগুলা করতে আমাকে ক্ষমা করে দিও(বথ্যায় কাতরাতে কাতরাতে কথা গুলা বলছে)

আমি:- মিষ্টি চুপ করো(হসপিটালে সামনে আসলাম)

ডাক্তার ডাক্তার.....

মিস্টার সাফাহেত ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে!(ডাক্তার)

স্টেচারে করে অপারেশন রুমে নিয়ে যাচ্ছে!

মিষ্টি আমার হাত ধরে আছে,হাত ছাড়তে চাইতেছে না একদমই)

আমি:- ডাক্তার ডাক্তার একটু দাড়ান(মিষ্টি কে কপালে একটা চুমু একে দিলাম,মেয়েটা বথ্যায় কাতরাচ্ছে)আমার লক্ষীটি তোমার কিছু হবে না,

আপনি এইখানে থাকুন,(ডাক্তার)

প্রায় ২ ঘন্টায় হয়ে গেলো কোনো খবর পেলাম না,,

আমি:-ডাক্তার ডাক্তার?(চোখ মুখে ভয় ভয় ভাব)

ডাক্তার:- পেশেন্ট এর অবস্থা খারাপের দিকে আছে!আমরা চেষ্টা করছি প্লীজ নিজেকে সামলান

(হসপিটালের বসার জায়গায় বসে বসে ভাবছি আমি আর মিষ্টি সব ভাল মুহুত্ব গুলার কথা,মেয়েটা কতোটা অভিমানি,একটা আইসক্রিম চাই সেটা ও আমি না আনলে কতোটা অভিমান করে,বাহিরে ঘুরাতে নিয়ে গেলে কতোটা বাচ্চা হয়ে যায় ভাবতে লাগলাম আর হাসি দিলাম)

[হঠাত একটা বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পেলাম]

ডাক্তার:-আলহামদুল্লিলাহ আপনার ছেলে হয়েছে,

আমি:- (খুশি হলাম হয়তো মিষ্টি ও ভাল আছে এখন)ডাক্তার আমার মিষ্টি কেমন আছে?

ডাক্তার:(চুপ করে আছে)

আমি:- কি হলো ডাক্তার মিষ্টি কেমন আছে,আমার তো টেনশন হচ্ছে বলছেন না কেন?

ডাক্তার:- সরি আমরা আপনার ওয়াফ কে বাচাতে পারলাম না,

[চোখ মুখে অন্ধকার হয়ে গেলো,আমার পৃথিবীটা সব উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে সেন্সলেন্স হয়ে গেলাম]

(আমার মিষ্টির পড়ে আছে বেন্ধের উপর)

আমি:- (কাদতে কাদতে বলতে লাগলাম)মিষ্টি উঠো দেখো আমাদের বাচ্চাকে,মিষ্টি দুস্টুমি ভাল লাগে না একদম উঠো বলতাছি,মিষ্টি উঠো তোমার সাজানো সংসার টা শেষ হয়ে যাবে,,, আমাকে গুছিয়ে রাখবে কে? আমার সকল কাজ করে দিবে কে?এই মিষ্টি কথা তো এমনটা ছিলো না তুমি বলছো সারাজীবন এক সাথে থাকবে?(মিষ্টির নিথর দেহ টা জরিয়ে ধরে চিতকার করে কাদতে লাগলাম)

পাপ্পা পাপ্পা কাদতেছো কেন?মাম্মির কথা মনে পড়ছে তাই না?

আমি:- আরে না মিহির,কখন ঘুম থেকে উঠছো বাবা?

(মিহির আমার ছেলে,আজ ৪ বছর হয়ে গেলো আমার আর মিষ্টি কথা গুলা ভাবতেছিলাম,মিষ্টি মিহির কে জন্ম দেওয়ার সময় চলে গেলো,আমি এখনও বিয়ে করি নাই)

চলবে.........

গল্পটা কিছু অংশ সত্যি!!!!!