Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সিনিয়র_আপু_যখন_বউ



পর্ব : ৩
লেখক :
Sanvi Chowdhury
- কি বলছিস তুই এগুলো! তোর মাথা ঠিক আছে? লাবীব আমরা দুজন কাজিন হই। তুই আমাকে কি করে ভালোবাসতে পারিস? আর তাছাড়া আমি তোর থেকে গুনে গুনে তিন বছরের বড়। এমনটা তুই ভাবলি কি করে?
নীলার এরকম কথা শুনে আমি মুহূর্তেই পাথর হয়ে গেলাম। কি বলছে ও এসব? আর কেনইবা বলছে? ওকি আমার সাথে এখন মজা করতেছে নাকি?🙄
আমাকে চুপ থাকতে দেখে নীলাই বলতে লাগলো "লবীব তুই ভাবতে পারছিস এটা অন্য লোকজন জানতে পারলে কি ভাববে? আমি তো বিশ্বাস করতে পারতেছি না তুই এমন কিছু ভাবিস কি করে?তোর এই টুকু কমন সেন্স নাই?"
- কিরে চুপ করে আছিস কেন? (হালকা ধাক্কা দিয়ে)
- তুমি এসব কি বলছো নীলা?
- ঐ চুপ! আপু বল।
- তোমার সমস্যাটা কোথায়?
- মানে? তুই বুঝতে কেন পারছিস না আমি আর তুই আমরা কাজিন। তুই যেটা ভাবছিস সেটা হতে পারে না।
- তো কি হয়েছে। কাজিনদের মাঝে কি প্রেম-ভালোবাসা বিয়ে হয় না? তোমার নিজের বাবা-মাই তো কাজিন ছিলো। তারা বিয়ে করেনি? কৈ কেউতো কখনো এ নিয়ে কিছু বলেনি।
- হ্যা ঠিক আছে। কিন্তু আমি তোর থেকে বয়সে বড়। এটা হয় না লাবীব।
এবার আমার রাগ উঠে গেলো। তখন বললাম "তোমার সমস্যা কি? এখন উল্টা কথা কেন বলতেছো? তুমি নিজেইতো আগে আমাকে ভালোবাসার কথা জানালে। আর এখন কি আবল-তাবল বকতেছ? শুন এটা কিন্তু মুটেও ইয়ারকির বিষয় নয়। আমার জীবনের প্রশ্ন। আমার ভালোবাসার প্রশ্ন।"
- আমি তকে কখন বললাম যে আমি তকে ভালোবাসি?! (অবাক হয়ে)
- আরে? আজকেই তো বললে!
- দেখ লাবীব একদম ফাজলামো নয় অনেক সহ্য করছি😡
- আরে! তুমিইতো আমাকে ঐ ভয়েজ ম্যাসেজ আর চিরকুট দিলে। তুমিতো বললে যে তুমিও নাকি আমাকে ভালোবাসো? তাহলে এখন এরকম করছো কেন?
-কিসের মেসেজ আর কিসের চিরকুট?😳
নীলার এরকম ব্যবহারে ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেছি। ইচ্ছে করছে কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেই। কিন্তু রাগ সংবরণ করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলাম। চিরকুটটা আমার পকেটেই ছিলো। সেটা বের করে ওর হাতে দিলাম। চিরকুটটা নীলার হাতে দেওয়ার পর এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কারণ আমি দেখতে চাই ও এখন কি বলে আর করে।
নীলা চিরকুটটা হাতে নিয়ে ওটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমিও এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু চিরকুটের দিকে তাকিয়ে আছেতো তাকিয়েই আছে। মাথাও তুলছে না আর কিছু বলছেও না। ধৈর্য হারিয়ে আমিই জিজ্ঞেস করলাম "কিহলো? এখন চুপ করে আছো কেন? কিছুতো বলবে নাকি?"
লাবীব দেখ আমি অনেক সরি। কথাটা বলেই মাথা নিচু করে নিলো। তারপর বললো "লবীব আসলে অনেক বড় একটা গন্ডগোল হয়ে গেছে। দেখ আমি তকে দোষ দিচ্ছি না। এটা আমারই দোষ। i am really sorry.."
- কিসের গন্ডগোল? আর তুমিই সরিই বা বলছো কেন? সরি বলার দরকার নেই আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি।😊 এক মিনিট! তুমিকি ভয় পাচ্ছ নাকি? নাহলে...
- লাবীন প্লিজ! আগে আমার কথাটা শোন।
- আচ্ছা বলো।
- আসলে ঐ ভিউ কার্ডটা...
- হুম ঐ ভিউ কার্ডটা?
- ঐ ভিউ কার্ডটা নীলয়ের জন্য ছিলো! জানিনা কি করে? হয়তো বাই মিসটেক ঐটা তোর কাছে চলে গেছে। আই এম সরি লাবীব .....
নীলা আর কি কি যেন বলে যাচ্ছিলো। তার কিছুই আমার কানে আসছে। আমি একদম চুপ হয়ে গিয়ে যেন অন্য কোথাও চলে গেছি। এমন কেন হলো আমার সাথে? কষ্ট হচ্ছে খুব। চাপা কষ্ট। যেটা বাইরে কাউকে বলে বুঝানো যায় না....
তারমানে নীলা আমাকে নয় নীলয়কে ভালোবাসে। আর ঐ কথাগুলোও নীলয়ের জন্যই ছিলো। আমার জন্য নয়😢। এই কারণেই হয়তো নীলা নীলয়কে প্রটেক্ট করছিলো।
আমি মুখ তুলে নীলার দিকে তাকাতেই সে বললো " লাবীব সরি। কিন্তু তুই যেটা ভাবছিস সেটা কখনোই হতে পারে না। আর প্লিজ আমার আর নীলয়ের ব্যাপারটা এখন কাউকে বলিস না। সময় হলে.."
আমি নীলার আর কোনো কথা গ্রাহ্য না করে ধীরে ধীরে ছাদ থেকে নেমে গেলাম। নীলা হয়তো ডাক দিয়েছিলো। আমি শুনার চেষ্টা করিনি। কারো সাথে কোনো কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে ভীষন জোর বাতাস বইছে। হয়তো ঝড় আসতে চলেছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় ঝড়তো আমার ভেতরে চলছে। যেখানে আমি চেষ্টা করেও সামলাতে পারছি না। বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে গেছি। বাড়িতে ডুকতেই মা ব্যস্থ হয়ে পরে যে, ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে কেন বাড়ি ফিরলাম। মায়ের কোনো কথা কানে না নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। আর তারপরই ঘুম।
গভীর রাত্রে টের পেলাম গা গরম হয়ে গেছে। আর মাথায় জলপট্টি দেওয়া। কিছুনা? অভ্যাস মতোই জ্বর চলে এসেছে। ছোটবেলা থেকেই এটা চলছে। বৃষ্টিতে একটু ভিজলেই কঠিন জ্বর চলে আসে। মা জনতো যে আমার জ্বর আসবে। সেইজন্যই চলে এসেছে আমার ঘরে। আমায় চোখ খুলতে দেখে বললো "কিরে বাবা কষ্ট হচ্ছে খুব? তুই কেন শুধু শুধু বৃষ্টিতে ভিজতে গেলি? আমি তকে এতো বলি। তারপরও আমার কোনো কথা শুনিস না তুই।" মায়ের কথা শুনে আমার নীলার কথা মনে পড়ে গেলো। নীলাও আমাকে সবসময় বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করতো। ওর কথা মনে পড়তেই যেন ভিতরে কষ্টটা আবার নাড়া দিয়ে উঠলো। আমি বালিশ ছেড়ে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে কেঁদে দিলাম। মা মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করছিলো কি হয়েছে আমার? কিন্তু আমি কিছু বলিনি। তারপর হয়তো ঘুমিয়েই পড়েছিলাম।
তারপর যখন চোখ খুললাম মাথায় একটা শীতল হাত অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি নীলা বসে আছে। আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। আমার চোখ খুলতে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে নরম গলায় বললো "কিরে এখন কেমন লাগছে?" আমি কিছু না বলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। নীলা কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। কারণ মা ঘরে চলে এসেছে খাবার নিয়ে। খাবরটা টেবিলে রেখে মা নীলাকে উদ্দেশ্য করে বললো "নীলা মা এবার তুই ওঠ। তুই কিছু খেয়ে নিয়ে ঘরে গিয়ে বিশ্রায় নে। আমি তোর খাবারটা ওখানেই রেখে এসেছি।"
তখন নীলা বললো "কাকিমা আমি পরে খেয়ে নিব। তুমি বরং খবারটা আমাকে দাও আমি লাবীবকে খাইয়ে দিচ্ছি।" মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো "অনেক হয়েছে মা। এবার তুইও ওর সাথে অসুস্থ হয়ে যাবি। এমনিতেতো ঠিকমতো খাসনি। তাও আবার কাল সারারাত ঘুমসনি।"
- কিন্তু!
- কোনো কিন্তু নয়। আমি যা বলছি সেটা কর।
মায়ের কথা শুনে নীলা আর কিছু বললো না। আমার দিকে একবার তাকিয়ে ঘর থেকে চলে গেলো। মায়ের কাছে জানতে পারলাম যে, আমি নাকি গত সারাদিন সারারাত জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে ছিলাম। আর নীলা সবকিছু ছেরে-ছুরে এতোক্ষণ আমার যত্ন করছিলো। খুবই অবাক হলাম মায়ের কথাগুলো শুনে। নীলা আমার জন্য এতোটা ভাবে?
মনেমনে অনেকটা খুশি হয়ে গেলাম। পরক্ষণেই সব খুশি গায়েব হয়ে গেলো এটা মনে পড়তেই যে, নীলা নীলয়কে ভালোবাসে। তারপর খাবার আর ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
দুপুরের দিকে ঘুমটা ভাঙ্গলো। নিজেকে খুব চাঙ্গা আর ফুরফুরে লাগছে। জ্বর-টর এখন নেই বললেই চলে। উঠে গিয়ে ওয়াসরুমে গেলাম। বাইরে বেরুতেই দেখি নীলা। আমাকে দেখে হাসিমুখে প্রশ্ন করলো "কিরে কেমন আছিস?" আমি বিছানায় বসে বললাম "একদম ভালো। এখন একটুও জ্বর নেই।"
তখন নীলা পাশের টেবিলে রাখা সুপের পেয়ালাটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো " যাক বাবা তুই ঠিক হয়ে গেছিস। যা ভয় পাইয়ে দিছিলিনা তুই!" আমি কিছু না বলে নীলার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এটা দেখে সে বললো "কিরে হা করে কি দেখছিস? খেয়ে নে। ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
আমি নীলার কোনো কথা কানে না তুলে পেয়ালাটা রেখে দিলাম। নীলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো "কিহলো? খাবি না?"
- I love you.
- মানে?
- বিশ্বাস করো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
- দেখ লাবীব পাগলামী করিস না। আমিতো তোকে সবকিছুই বললাম তারপরও তুই?
- আমি কোনো পাগলামী করছি না। আমি যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
- লাবীব তুই ভালো করেই জানিস এটা কখনো সম্ভব না। ভুলে যা এসব। দেখবি তুই আমার থেকে ভালো কাউকে পাবি। যে তোকে ভালোবাসবে সুখে রাখবে।
এবার আমি উঠে দাড়িয়ে নীলার হাত ধরে ফেলে বললাম "বিশ্বাস করো। আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি। সবসময় খালি তোমার কথাই ভাবি। আর আমার অন্য কাউকে চাইনা। তোমাকেই চাই।" নীলা আমার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলো "লাবীব হাত ছাড়। পাগলামী করিস না। আমাদের অনেক ভালো একটা সম্পর্ক সেটা নষ্ট করিস না।" কথাটা বলেই আমার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমি আমি ওর পথ আটকে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। তখন নীলা বলল..
- লাবীব দরজাটা বন্ধ করলি কেন? খুল বলছি। আর আমাকে যেতে দে।
- তুমি কেন বুঝার চেষ্টা করছো না? আমি সত্যিই তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
- দেখ লাবীব তুই কিন্তু এবার তোর লিমিট ক্রস করে ফেলছিস। (কিছুটা ভয়ার্ত কন্ঠে)
তারপর...
চলবে......

Post a Comment

0 Comments