-- জ্বি কাটুন আমি দেখছি। (আমি)
নিলা থরথর করে কাঁপা গলায়....
-- আমি কিন্তু সত্যি বলছি আমি কেটে ফেলবো।(নিলা)
-- আরে কাটুন লেট করছেন কেন?
আমার কথাটা শুনে নিলার চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু পানী জমতে লাগলো, আমি কোনো কেয়ার না ব্যাগ থেকে একটা বুক বের করার জন্য হাতটা ভেতরে ঢুকিয়ে ব্যাগের ভেতরে চোখ রাখলাম হঠাৎ বুঝতে পারলাম টপটপ করে আমার ব্যাগের উপর কি যে পড়তে লাগলো, মেয়েটা কি সত্যিই হাত কেটে ফেলল নাকি, আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখি নিলা পাগলামি করে হাতটা কেটে ফেলেছে, আমি সাথে মেয়েটার হাতটা চেপে ধরার জন্য উঠতেই...
-- খবরদার আমায় টার্চ করবা না তুমি (নিলা)
আমি রক্তকে একটু বেশিই ভয় পাই, তাই আমি কাঁপা কাঁপা গলায়...
-- এই কাছে আসুন প্লিজ কাছে আসুন, রক্ত যে আপনার হাতে।
নিলা এবার হাল্কা হেসে....
-- তুমি তো রক্ত দেখতে চেয়েছিলে দেখো কতো রক্ত।
আমি এবার মাথা গরম নিয়ে...
-- পাগল নাকি???? 

-- হ্যাঁ আমি পাগল।
-- এই কাছে আসো বলছি...
এটা বলেই আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতেই ও কিছুটা দূরে সরে গেলো..
-- এই একদম কাছে আসবা না।
মেয়েটার হাতটা থেকে টপটপ করে বেগে রক্ত বের হচ্ছে, আমি দুচোখে দেখতে পারছি না। আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে চেপে ধরে আমার পকেটে থাকা রুমালটা বের করে ওর হাতের কাটা জায়গাটার উপর রুমালটা জড়িয়ে দিলাম। আর আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে....
-- পাগল আপনি? আমি তো মজা করছিলাম আপনার সাথে।
মেয়েটার কাটা হাতের রক্ত দেখে আমার চোখেও পানী এসে গেছে।
নিলা আমার দিকে তাকিয়ে....
-- বেশ তো।
-- চলুন ডাক্তারের কাছে যাই।
নিলা এবার ঘাড় নেড়ে....
-- লাগবে না ডাক্তারের কাছে যাওয়া
-- পাগল আপনি, এতো রক্ত ঝড়ছে আর বলছেন ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না।
নিলা এবার আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে.....
-- আমার ডাক্তার আমার সামনে, আমায় সে নিজে থেকে টার্চ করেছে এর থেকে বেশি আর আমার কাছে কি চিকিৎসা হতে পারে।
-- দূর আপনি কি যাতা বলছেন।
আমি নিলার আর কোনো কথা কেয়ার না করে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ওর স্কুটিটা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম।
ডাক্তারের কাছে যেতেই শুনলাম হাতটা নাকি বেশিই একটু কেটে ফেলেছে তাই সেলাই করতে হবে আর নিলা একদম সেলাই করাবে না কারন ও খুব এতে ভয় পাই।
আমি আর নিলা এখন একসাথে। নিলা আমার সামনে স্ট্রেচারে বসে আছে আর আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে। যেভাবে হোক মেয়েটাকে মানাতে হবে, নয়তো রক্ত একদম থামছেই না।
আমি নিলার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা মাথায়.....
-- নিলা প্লিজ সেলাই করিয়ে নিন তা নাহলে রক্ত থামবে না যে। (আমি)
নিলা ঘাড় নেড়ে....
-- আমি ওসব করবো না।
-- প্লিজ, আমি আর দুচোখে দেখতে পারছি না তো
-- তুমি তো দেখতেই চাইছিলে দেখো দুচোখ ভরে দেখো।
আমি নিজেকে খুব খারাপ মনে করতে লাগলাম।,ভাবতে পারিনি একটা মেয়ে আমার কথায় পাগলামি করে এরকম একটা কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলবে।
আমি মাথা নীচু করে....
-- সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতোটা রিয়েক্ট করবেন।
নিলা এবার আমায় চোখে ইশারা করে একটু ক্লোজে আসতে বলল আর আমি ওর কাছে যেতেই.....
-- আমি এমনই, যেটা বলি সেটাই করি।
আমি এবার নিরুপায় হয়ে মেয়েটার একটা হাতে হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে....
-- প্লিজ নিলা সেলাইটা করিয়ে নিন।
নিলা আবারো ঘাড় নেড়ে....
-- নাহ।
আমি বারেবার এক কথা বলতে পারি না, অল্পতেই আমি খুব রেগে যাই। তাই এবারো আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে.....
-- আপনি সেলাই করাবেন।
এই এদিকে আসেন ভাই সেলাই করবেন আসুন।

মেয়েটা আমার ধমক শুনে ভেজা বেড়ালের মতো জড়ো হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
এবার আস্তে আস্তে সেলাই করা শুরু হলো। মেয়েটা কান্না করছে আমায় জড়িয়ে ধরে কারন ওর হাতে এখন সেলাই করা হচ্ছে। কান্না তো করবেই সেলাই এর যন্ত্রনা তেমন বেশি না তবে ভয় একটা মানুষের ফিলিংস যা বুকের হার্টবির্টকেও ক্ষনিক সময়ের জন্য অফ করে দিতে পারে।
নিলা আমার বুকে মাথা ঘষতে লাগলো যন্ত্রনায়, আমি ওর মাথায় হাত দিয়ে....
-- আমি তো আছি ভয় পাচ্ছেন কেন?
এটা বলে আমি ওর মনে সাহস জোগাচ্ছি।
নিলার আরেকটা হাত আমার পিঠে জোরে খামছে ধরেছে।
অবশেষে সেলাই শেষ করা যেতে যে সেলাই করছিলো সে আমাদের দিকে তাকিয়ে....
-- বড্ড ভালোবাসেন বুঝি একে অপরকে তাই হয়তো এতোটা পাশে থেকে একটা মেয়ের সব যন্ত্রনার অর্ধেক যন্ত্রনা আপনিই পেয়েছেন বুঝলাম যতোটা। আপনাদের দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগল।
আমি এরকম শোনা মাত্রই আমি নিলার মাথা থেকে হাতটা সরিয়ে আমি ওর থেকে দূরে চলে এলাম আর আমতাআমতা করে....
-- সরি আপনি যা ভাবছেন ভুল, আমরা লাভার না।
-- সরি ভাইয়া, আপনারা তাহলে ফ্রেন্ডস। (ভাইয়াটা)
-- না, কেউ না।
এটা শুনে ভাইয়াটা কিছু কনফিউজড হয়ে....
-- যাহ বাব্বাহ তাহলে শত্রু নাকি?
নিলা এবার....
-- ভাবতে পারেন তেমনই। (আমার কি আড়চোখে তাকিয়ে)
এটা শোনা মাত্রই আমি ওর দিকে তাকাতেই ও ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
আমরা এবার যা বিল হলো পে করে বাইরে বের হয়ে আসতেই নিলা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আমি ওকে ধরে....
-- আর ইউ ওকে। (আমি)
-- আমি ঠিক আছি। (নিলা)
আমি নিলাকে না ছেড়ে ওকে ধরে চলতে লাগলাম, কারন ওর অনেক ব্লিডিং হয়েছে তাই উইক ফিল করছে অনেক।
আমি এবার স্কুটির পিছনে ওকে বসিয়ে বললাম....
-- আমায় ধরুন ভালোভাবে নয়তো পড়ে যেতে পারেন। (আমি)
নিলা এটা শোনামাত্রই আমায় খুব জোরে চেপে ধরল, আমি চোখ রাঙিয়ে....
-- এখন না আমি আগে বসি তারপর।
নিলা সাথে সাথে লজ্জায় ছেড়ে দিলো আর মাথা নীচু করে....
-- ওকে।
আমি এবার ওর সামনে বসা মাত্রই ও আমাকে পিছন থেকে খুব জোরে চেপে ধরল এবং পিঠের মাঝখানে মাথাটা রাখলো। আমি কিছু বলতে পারলাম না কারন ও হয়তো এখন অনেকটাই উইক সো যদি রাস্তায় পড়ে যায় তারথেকে আমায় বরং চেপে ধরুক তাহলে সেফটি থাকবে।
আমি এবার স্কুটিটা স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় অন দা অয়ে, নিলা আমার ঘাড়ের কাছে মুখটা এনে....
-- অভ্র তোমায় একটা কথা বলবো....(নিলা)
-- হুম বলেন।(আমি)
-- জানো তো তোমার সেদিন একটা কথা আমায় চেঞ্জ করতে বাধ্য করেছে।
-- কোন কথাটা শুনি?
-- ওই বলে ছিলেন টাকা দিয়ে দুনিয়ার সব জিনিসটা কেনা যায় তবে সুখ না। হ্যাঁ অভ্র আমি টাকা আমি দুহাতে উড়াতে পারবো যতো চাইবো কিন্তু জানো তো আমার ফ্যামিলি আমায় টাইম দেয় না, আমার ফ্যামিলিতে শুধু আমরা তিনজন আমি আম্মু আর আব্বু। ওরা দুজন সবসময় বিজনেস নিয়েই বিজি থাকে, আমাকে তো দূরের কথা ওনারা একে অপরকে বিজনেস মিটিং ছাড়া টাইম দেন না। আমি কখনো সুখ খুঁজে পাইনি। আমি বাসা গেলে আমার আম্মু আমার কাছে দৌড়ে এসে বলে না নিলা মা যা হাত মুখ ধুয়ে নে আমি তোর জন্য খাবার রেডি করে রাখছি। কখনো আমায় তারা শাসন করেনি তার জন্যই আমি এতোটা বেড়ে গেছি। আমার আব্বু কোনোদিন বাসায় ফেরেন আবার ফেরেনই না। আব্বুর সাথে হয়ত সপ্তাহে একদিন দেখা হয়, যদিও আমার ভাগ্যে থাকে।
অভ্র আমি সত্যিই নোটের ভাজে থেকেও ফ্যামিলির ভালোবাসা থেকে আমি বিচ্ছিন্ন আজ।
মেয়েটার সব কথা গুলো বলে আমার ঘাড়ে মুখ লুকানোর ট্রাই করতেই আমি ঘাড় নাড়িয়ে নিলাম আর ও ভয়ে আমার ঘাড় নেড়ে মাথাটা তুলে নিলো।।আমি গম্ভীর হয়ে...
-- দেখুন নিলা আপনি বদলেছেন তারজন্য অনেক ধন্যবাদ আল্লাহের কাছে। কিন্তু আমি আপনাকে বদলানোর জন্য ওসব কথা বলিনি জাস্ট বাস্তব সমাজের কথাগুলো বলেছি।
-- জানি, এজন্যই তো তোমায় এতো ভালো লাগে আমার।
-- ধন্যবার তবে বেশি ভালো লাগার অভ্যাসে আনবেন না আমায়, আমি কোনো চাতক পাখির মতো একজায়গায় কখনো থাকি না সবসময়।
-- অসুবিধা নেই, আমায় শুধু তোমার অবেলার দীর্ঘশ্বাসে, আমাকে রেখে দিয়ো। আমার না বলা গল্পে, তুমি থেকে যেও সারাটাজীবন।
আমি পুরোটা বুঝতে না পেরে....
-- বুঝলাম না কিছুই.....
নিলা হাল্কা হেসে.....
-- জানি বুঝবে না তুমি, তবে তোমায় আমি একদিন বুঝিয়েই ছাড়বো আমার আমিটা তোমার জন্য কতটা প্রয়োজন।
আমি নিলার পাগলামো কথা কেয়ার না করে কোনো কথার রিপ্লাই দিচ্ছি না আর এদিকে নিলা গোটা রাস্তা বকবক করতেই থাকল।
কলেজের ভেতরে এসে স্কুটিটা পার্কিং করে চাবিটা ওর দিকে তুলে ধরতেই ও হাল্কা হেসে.....
-- এভাবে তোমার মনটাও কখনো তুলে দিও আমায় দেখে নিও কতোটা যত্নে তুলে রাখি।
আমি শুনেই...
-- মানে....
নিলা এবার ঈগলের মতো চাবিটা ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে নিলো আর আমার দুটো গাল টেনে হেসেহেসে....
-- গুলুমুলু আমার, কিচ্ছু বোঝে না।
এটা বলেই ভয়ে দৌড় দিলো আমার চোখের সামনে থেকে। আমি নিলার এই পাগলামি দেখে প্রথমে রেগে গেলেও পরে একটু ঠোঁটের কোনে হাসি এনে কপালে হাত দিয়ে...
-- পাগলি একটা।
#চলবে....
পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।
0 Comments